৬ মাস হকারি করে আসামি ধরলেন ডিবি কর্মকর্তা


নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০১৯, ০৬:০৮ পিএম
৬ মাস হকারি করে আসামি ধরলেন ডিবি কর্মকর্তা

২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর রাজধানীর শ্যামপুরে খুন হন হেলাল উদ্দীন। তার সঠিক পেশা কারও জানা ছিল না। এলাকাবাসীর চোখে তিনি ইয়াবা সেবন ও বিক্রি করতেন। আবার পুলিশকে মাদক ব্যবসার খবরও সরবরাহ করতেন। নিজেকে পুলিশের সোর্স দাবি করে এলাকার অনেককে ভয়ভীতি দেখাতেন। জেলে ঢোকানোর ভয়ও দিতেন।

দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এসব ‘অপকর্মের’ জেরে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনায় জড়িয়ে পড়েন স্থানীয় নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের মধ্যে ছিলেন রিকশাওয়ালা, পান দোকানদারও।

২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর বিকেলে শ্যামপুর সেতু এলাকায় আলেফ চাঁনের রিকশার গ্যারেজ থেকে হেলাল উদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় তার ভাই বেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ক্লুলেস মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ডেমরার জোনাল টিম।

ক্লুলেস এ মামলায় দেড় বছরে কোনো অগ্রগতি না থাকলেও সম্প্রতি ওই ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তারা হলেন- মো. সাদ্দাম ও শফিকুল ইসলাম রতন। সাদ্দাম রিকশাচালক এবং রতন স্থানীয় একটি পানের দোকানদার।

ক্লুলেস মামলাটির জট খোলা খুব একটা সহজ ছিল না। তদন্তে নেমে ডিবির কর্মকর্তাকে নাকানি-চুবানি খেতে হয়। অপরাধীরা শিক্ষিত না হওয়ায় প্রযুক্তি দিয়ে তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছিল না। এ কারণে ডিবির তদন্ত কর্মকর্তাকে ছয় মাস শ্যামপুরে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে এবং হকারি করে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। এরপর সব তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে গ্রেফতার করা হয় তাদের।

মামলার তদন্ত নিয়ে ডিবির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নাজমুল হাসান বলেন, ক্লুলেস মামলাটি তদন্তে ছদ্মবেশে ডিবির এক কর্মকর্তা রিকশা গ্যারেজের পাশে বাসা ভাড়া নিয়ে তদন্ত শুরু করেন। একপর্যায়ে ঘাতকদের চিহ্নিত করে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হেলালের চাঁদাবাজি, অত্যাচার ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে রিকশাচালকরা হত্যার পরিকল্পনা করেন।’

ওই হত্যার ঘটনায় ৭-৮ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।

গ্রেফতারকৃতরা জবানবন্দিতে হেলালউদ্দিনকে হত্যার কারণ উল্লেখ করেন। তারা বলেন, হেলাল ইয়াবা ব্যবসা, চাঁদাবাজির পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর অত্যাচার চালাতেন। হত্যা করার আগের দিন তিনি শ্যামপুর এলাকার একজনের কাছে চাঁদা আনতে যান। সেখানে বাড়ির কর্তাকে না পেয়ে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও মাকে মারধর করেন। এতে অন্তঃসত্ত্বার গর্ভের সন্তানটি মারা যায়। ওই ঘটনার পরপরই হেলালকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

হত্যার ঘটনায় তারা দুজন ছাড়াও অংশ নেন স্বপন, সোহেল, রানা, পিচ্চি কাউছার ও সজীব। তাদের কেউ হোটেলের বেয়ারা, কেউ মোটরসাইকেল সার্ভিসিংয়ের দোকান কর্মচারী আবার কেউ রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ।

সাদ্দাম ও রতন হেলালের পূর্ব পরিচিত। তারা একসঙ্গে দুপুরের খাবেন বলে হেলালকে কদমতলীর আলেফ মিয়ার রিকশার গ্যারেজে ডেকে আনেন। সেখানে তারা একসঙ্গে একই টেবিলে বসে দুপুরের খাবার খান। খাবার শেষে ওই গ্যারেজেই হেলালকে ৭-৮ জন মিলে ছুরি দিয়ে পেট চিরে হত্যা করেন।

গো নিউজ২৪/আই

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর